বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩

শবে বরাতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত আছে?

শেয়ার করুন

শাবানের ১৫ তারিখের রাত গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলোর একটি। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের ক্ষমা করেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন। সেই রাতে তিনি মুশরিক এবং অন্য ভাইয়ের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’ (মুসনাদে বাজজার: ৮০, মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৬৬৪৬)

এই রাত ফজিলতপূর্ণ হলেও এতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত ও আমল নেই। তবে বিশেষ কিছু আমল করা যায়। আর বিশুদ্ধ মতানুসারে শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলগুলো একাকী করণীয়। ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার, তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, সিজদা দীর্ঘ হওয়া, দোয়া-ইস্তিগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি : ৩/৩৮২, ৩৮৩)

জামাতের সঙ্গে নামাজ

এশা ও ফজরের নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা।

নফল নামাজ

দীর্ঘ সেজদায় দীর্ঘ নফল নামাজ পড়া। দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব এবং যে সুরা দিয়ে সম্ভব পড়তে থাকা। নির্দিষ্ট সুরা ও নির্ধারিত রাকাতসংখ্যার কোনো নিয়ম নেই। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘এ রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দীর্ঘ সময় ধরে সেজদাবনত অবস্থায় পড়ে থাকতেন।’ (শুয়াবুল ঈমান, বায়হাকি, হাদিস : ৩৫৫৪, তুহফাতুল আহওয়াজি : ৩/৩৬৭)

সালাতুল হাজত

সালাতুল হাজত পড়া

সালাতুত তাসবিহ

সালাতুত তাসবিহ পড়া। এটি চার রাকাতবিশিষ্ট নফল নামাজ। প্রতি রাকাতে ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ ৭৫ বার করে চার রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়া। হাদিসে আছে, ‘মহান আল্লাহ এ নামাজ আদায়কারীর প্রথম-শেষ, অতীত-বর্তমান, ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত, ছোট-বড় এবং প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ (আবুদাউদ, হাদিস : ১২৯৭, রদ্দুল মুহতার : ২/২৭)

কোরআন তেলাওয়াত, জিকির

বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, জিকির-আজকারে মশগুল থাকা।

তওবা

তাওবা-ইস্তিগফার করা, সব মুমিন মুসলমানের ইহকালীন-পরকালীন কল্যাণ ও ক্ষমার জন্য প্রার্থনা করা এবং দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করে রাত কাটিয়ে দেওয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘কাঁদো! যদি কাঁদতে না পারো, তাহলে কাঁদার ভান করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৬)

তাহাজ্জুদ নামাজ

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া। এশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত নফল নামাজ আদায় করা যায়। এটাকে ‘সালাতুল লাইল’ বা তাহাজ্জুদ নামাজ বলে। তাহাজ্জুদ শেষ রাতে পড়া উত্তম।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্কৃষ্ট নামাজ হচ্ছে রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৬৩, ফাতাওয়া দারুল উলুম : ৪/২২৩, ২২৭)

কবর জিয়ারত

মৃত আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করা এবং তাদের মাগফিরাত কামনা করা। এ রাতে রাসুল (সা.) একবার মদিনার প্রাচীন কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে একাকী গিয়েছিলেন; কোনো সাহাবিকে সঙ্গে নিয়ে যাননি। তাঁর অনুকরণার্থে জরুরি মনে না করে একাকী কবরস্থানে যাওয়া যাবে। তবে এ আমলকে আবশ্যকীয় মনে করা যাবে না। আর মাঝেমধ্যে ছেড়েও দিতে হবে। (ইসলাহি খুতুবাত : ৪/২৫৯-২৬০)

রোজা

শবেবরাতের পরের দিন রোজা রাখা। এটি মুস্তাহাব আমল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অর্ধ শাবানের রজনী ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোজা রাখো।’ তা ছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি রোজা রাখার কথা সহিহ হাদিসে এসেছে এবং ওই দিন ‘আইয়ামে বিজ’ (চান্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ)-এর অন্তর্ভুক্ত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮, লাতায়িফুল মাআরিফ : ১/১৫১-১৫৭)

শেয়ার করুন »

লেখক সম্পর্কে »

মন্তব্য করুন »

Translate »