শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান

শেয়ার করুন

:: হাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম ::

আজ ১৭ মার্চ শুক্রবার বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসন-শোষণ-জুলুম থেকে বাঙালি জাতি মুক্তি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি নির্দেশে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে জেলজুলুম সহ্য করে বাঙালিকে স্বাধীনতার সোপানে নিয়ে গেছেন। ৯ মাসের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্যদিয়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। তবে ৩০ লাখ শহীদ ও হাজার হাজার মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ, লাল সবুজ পতাকা। জাতির পিতার জš§বার্ষিকী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। ১৯২০ সালের এই দিনে (১৭ মার্চ) তদানীন্তন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জš§গ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান। বাবার নাম শেখ লুৎফর রহমান, আর মা সায়েরা খাতুন। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়।

বঙ্গবন্ধু জীবনব্যাপী একটিই সাধনা করেছেন, বাঙালির মুক্তির জন্য নিজকে উৎসর্গ করা। ধাপে ধাপে প্রতিটি সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৪৮ থেকে ’৫২ অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন, ’৫০ থেকে ’৫৪ জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ, ’৫৪ থেকে ’৫৬ সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন, ’৬৪তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতা, ’৬৬-তে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্থাৎ স্বাধিকার তথা ৬ দফা, ’৬৯-এর

গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে মৃত্যুকূপ থেকে মুক্তমানব হয়ে বেরিয়ে এসে সার্বজনীন ভোটাধিকারের দাবি এবং সংখ্যাগুরুর অধিকার আদায়, ’৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ভূমিধস বিজয় অর্জন ও পরিশেষে ’৭১-এ স্বাধীনতার ডাক দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।

জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ঐতিহাসিক এই পর্বগুলো সংঘটনে তাঁকে জীবনের ১৩টি বছর কারান্তরালে কাটাতে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তিকামী মানুষের নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার একটি উক্তি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, ‘It is said that no one truly knows a nation until one has been inside its jails.’ অর্থাৎ ‘বলা হয়ে থাকে যে, সত্যিকার অর্থে কেউ একটি জাতিকে জানতে পারে না যতক্ষণ না কেউ একজন এর কারাগারে বন্দি থাকে।’ ২০১২ সালে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সরকারি সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা যাই এবং রোবেন আইল্যান্ডে নেলসন ম্যান্ডেলার কারাকক্ষ পরিদর্শন করি। এখানেই আমার মনে হয়েছে বঙ্গবন্ধুকেও মিয়ানওয়ালি কারাগারে এরকম একটি নির্জন কক্ষে বন্দি রাখা হয়েছিল। এই বন্দিশালাতেই নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর দীর্ঘ ২৭ বছর কারাজীবনের ১৮ বছর বন্দি ছিলেন। স্বচক্ষে দেখেছি বন্দিশালার নির্জন সেলটি। যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে কারাবন্দি ম্যান্ডেলার বিছানার জন্য একটি ও গায়ে দেওয়ার জন্য আরেকটি কম্বল, একটি প্লেট, গ্লাস ও জগ। ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটি পাঠ করে জেনেছি কারারুদ্ধ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর সম্বল ছিল একটি থালা, বাটি, গ্লাস আর কম্বল। প্রকৃতপক্ষে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থটির শিরোনাম তিনি দিয়েছিলেন ‘জেলখানার সম্বল থালা বাটি কম্বল।’ এখানে গিয়েই বারবার আমাদের কেন্দ্রীয় কারাগার এবং পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারের কথা ভেবেছি, যে কারাগারে বঙ্গবন্ধু দীর্ঘকাল বন্দিজীবন অতিবাহিত করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাজনীতির কবি, মহানায়ক, সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি। এ দেশ ধন্য তার মতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালির জন্ম হয়েছিল বলে। তিনি বাংলার বুকে জন্ম না নিলে আমরা আদৌও স্বাধীনতা পেতাম কি-না জোর দিয়ে বলা যায় না। হয়তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা অধরাই থেকে যেত। জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতির পিতার প্রতিটি স্বপ্ন পূরণে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ’৭৫ জাতির পিতা সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশে ক্ষমতায় পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা জেঁকে বসেছিল। তারা দেশকে নব্য পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা করেছে। তবে ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং জাতির পিতাকে আন্ধকারে ঢেকে রাখার যে প্রয়াস পাকিস্তান নিয়েছিল তা বানচাল করে দিয়েছে। নতুন প্রজন্ম আজ জাতির পিতার সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। তিনি ছাড়া কোনও ভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না সেটা এ প্রজন্ম জানতে পারছে। আমরা মনে করি কখনও আর জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার আয়োজন কেউ করতে পারবে না। দিন যত যাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম ততই উদ্ভাসিত হচ্ছে। বিশ্বের সেরা নেতাদের প্রথম কাতারে জাতির নাম সগৌরবে উচ্চারিত হয়। তার নাম শুনলে যে কোনো বিশ্বনেতার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক বাংলাদেশের কণ্ঠ

শেয়ার করুন »

লেখক সম্পর্কে »

মন্তব্য করুন »

Translate »