বাজারে সরবরাহ কিছুটা বাড়ায় দাম কমেছে ইলিশের। ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ইলিশ এখন সাত থেকে আটশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া মরিচের দাম কমে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে গত কয়েকদিন ধরে আলোচনায় থাকা মসলা আদার দামও।
শুক্রবার (২১ জুলাই) রাজধানীর বাসাবো মাদারটেক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ছোট চিংড়ি কেজি ৮০০ টাকা, ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে মাঝারি মানের পাবদা। রুই কেজি ৩৫০ টাকা গত সপ্তাহে ছিল ৩০০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পাঙ্গাশের দাম। বড় সাইজের পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ২০০ এবং মাঝারি সাইজের প্রতি কেজি ১৮০ টাকা। তবে স্বস্তির সুবাতাস বইছে ইলিশের বাজারে। গত সপ্তাহে ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ইলিশ এ সপ্তাহে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে গত সপ্তাহে সবজির দাম কিছুটা বাড়তি থাকলেও এ সপ্তাহে বাজারে কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া শসা আজ ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ৮০ টাকার ঢেঁড়স এখন ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বড় লাউ পিস ৬০ টাকা। মাঝারি আকারের লাউ ৪০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচামরিচ গত সপ্তাহে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো ও গাজরের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা ও ১৪০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া উস্তা ও করলা কিছুটা দাম কমে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে৷
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে পটল, বেগুন ও কুশির, দুন্দুল ও ঝিঙার দাম।
এছাড়া শাকের মধ্যে পুঁইশাক মানভেদে ৩০ টাকা কেজিতে, কলমি শাক প্রতি আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক প্রতি আঁটি ১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বড় সাইজের রসুন (ভারতীয়) গত সপ্তাহে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আকারে ছোট রসুন (দেশি) গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে দাম কিছুটা কমে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে অপরিবর্তিত দামে ৪৫ টাকা কেজি দরে ভারতীয় পেঁয়াজ এবং ৬০ টাকা কেজি দরে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ঈদের পর থেকেই আকার ও মানভেদে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে আলু। এ সপ্তাহে আদার ঝাঁজ কমে ৪০০ টাকা কেজি দরের আদা ১৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এদিকে ফার্মের মুরগির লাল ডিম ১৪৫ টাকা ডজন, কিছুটা আকারে ছোট ডিম ১৪০ টাকা ডজন। গত সপ্তাহে সাইজভেদে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ডিম। এছাড়া গত সপ্তাহে ফার্মের সাদা ডিম ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে ১৪০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে। অপরদিকে গত সপ্তাহে ২০০ টাকা ডজনে বিক্রি হওয়া হাঁসের ডিম এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
মাংসের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এ সপ্তাহে কিছুটা কমে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া কক বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া অপরিবর্তিত দামে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
এরশাদ আহমেদ নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। আমার যা আয় তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হচ্ছে না। মাসের ১০ তারিখ হলেই টাকা শেষ। সারা মাস তাহলে কীভাবে চলব? যেভাবে সবকিছুর দাম বাড়ছে তাতে পরিবারের সব চাহিদা পূরণ করা অসম্ভব।
আছিয়া বেগম নামের এক ক্রেতা বলেন, আমি নিজেই সবসময় বাজার করতে আসি। এ সপ্তাহে দাম কিছুটা কম। কিন্তু টমেটো ২৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এটা ভাবা যায়? ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে বলে এক কেজি মাছ নিয়েছি। পরিবারের সকলের ইলিশ পছন্দের।
পেঁয়াজ, রসুন ও আলু বিক্রি করেন মোশাররফ মিয়া। তিনি বলেন, সবকিছুর দাম এ সপ্তাহে কিছুটা কম। মরিচ আর আদায় যে দাম ছিল তাতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আমরা অল্প পরিমাণে কিনি আবার বিক্রি করি। আমরা বুঝতে পারি সাধারণ মানুষের সমস্যা। আড়তদারতো বসে শুধু হুকুমই জারি করে।
তিনি আরও বলেন, আমি অনেকদিন ধরে এ ব্যবসা করি। আমি দেখেছি আগে যারা মাসের শুরুতেই ৫ কেজি পেঁয়াজ, রসুন কিনে নিতো এখন তারাও এক কেজির বেশির কিনতে চায় না।
রফিকুল ইসলাম নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, মাল যেমন দামে কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। আমাদের হাতে কিছুই নাই। মহাজনরা যেভাবে দাম ঠিক করে আমাদের সেভাবেই বিক্রি করতে হয়।
আরেক বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, আমদানির ওপর নির্ভর করে কাঁচাবাজারের সকল জিনিসের দাম। যেমন আমদানি হয় তেমন দাম ঠিক হয়। মাল বেশি আসলে দাম কমে। মাল কম পাইলে হুদাই পাইকারি বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে দেয়। আমাদের কিছুই করার নাই।
মো. জনি নামের মাছ বিক্রেতা বলেন, মাছের দাম স্থিতিশীল নয়। হুটহাট দাম বাড়ে-কমে। তাছাড়া সাইজ, মান ও সময় ভেদেও দাম কম বেশি হয়। এ সপ্তাহে ইলিশের দাম কিছুটা কমছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেশি। তাই দাম কিছুটা কম। সাধারণ মানুষ এক কেজি ইলিশ খাইতে গেলে অনেকবার ভাবত। এখন দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় সে সমস্যা কিছুটা কমেছে।
আপনার মতামত লিখুন :