সংবাদপত্রের নবম ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকের ট্যাক্স ও গ্র্যাচুইটি নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে পত্রিকার মালিক তথা কর্তৃপক্ষকে গণমাধ্যমকর্মীদের আয়কর পরিশোধ করতে হবে। গতকাল বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে এদিন রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ ও ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এমএমজি সারোয়ার (পায়েল)।
এ রায়ের ফলে দুই মাসের মূল বেতনের সমান আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকর এবং নবম মজুরি বোর্ডের সপ্তম অধ্যায়ে বিষয়টি আইনসম্মত হয়েছে বলে জানান আইনজীবী ড. কাজী আকতার হামিদ।
এর আগে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উজ্জামান। শুনানি শেষে আদালত ওই বছরের ২৫ নভেম্বর রুল জারি করেন। সেই রুলের যথাযথ ঘোষণা করে এ রায় দিলেন হাইকোর্ট।
এরপর ২৫ নভেম্বর সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক সংক্রান্ত নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের মূল রোয়েদাদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের দ্বাদশ অধ্যায়ে সংযুক্ত সাংবাদিক ও প্রেস শ্রমিকদের আয়কর ও আনুতোষিক সংক্রান্ত বিধান কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান আদালত। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, তথ্য সচিব ও শ্রম সচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ, ২০১৮-এর দাখিলকৃত সুপারিশগুলোর সঙ্গে মন্ত্রিসভা কমিটি সুপারিশ গ্রহণ করে জারি করা গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘সব শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রশাসনিক কর্মচারীরা কর্তৃক তাদের নিজ নিজ আয় থেকে প্রদান করতে হবে। সব শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীরা প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) হিসেবে প্রাপ্য হবেন।’
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুজ্জামান এই দুটি বিধান চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন করেন। তার পক্ষে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম (মিলন)।
ওই সময় রিটকারীর আইনজীবী বলেন, নবম মজুরি বোর্ডে সপ্তম অধ্যায়ে দুটি আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও মন্ত্রিপরিষদ একটি মূল বেতনের সমান আনুতোষিক (গ্র্যাচুইটি) দেয়ার সুপারিশ করেছে। সুপারিশটিও নবম মজুরি বোর্ডের গেজেটের দ্বাদশ অধ্যায়ে গ্রহণ করা হয়েছে, যা স্ববিরোধী বা সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ১৪৯ (২) ধারা অনুযায়ী শ্রমিকদের বিদ্যমান কোনো সুবিধা কেটে নেয়ার সুযোগ নেই।
ড. আকতার হামিদ বলেন, যেহেতু দুই মাসের মূল বেতনের সমান আনুতোষিক দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকর ছিল এবং নবম মজুরি বোর্ডের সপ্তম অধ্যায়ে বিষয়টি আইনসিদ্ধ করা হয়েছে, সেহেতু একটি মূল বেতনের আনুতোষিক দিতে মন্ত্রিপরিষদের সুপারিশ বেআইনি। এই যুক্তি আমরা তুলে ধরলে আদালত আয়কর ও আনুতোষিকের বিষয়ে রুল জারি করেন।
আদালতে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল শুনানিতে বলেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা চাকুরি বিধিমালা, ১৯৯৫ (সংশোধনী-২০১৩) বিধি ৫০-এর (২) এ বলা আছে যে, ‘কোনো কর্মচারীকে তাহার প্রত্যেক পূর্ণ বৎসর বা আংশিক বৎসরের ক্ষেত্রে ১২০টি কার্যদিবসে বা তদুর্ধ্ব কোনো সময়ের চাকরির জন্য ২ মাসের মূল বেতনের হারে আনুতোষিক প্রদান করা হইবে।’
২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। পরে বিচারপতি নিজামুল হক ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন। তার ভিত্তিতে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর ওয়েজ বোর্ডের গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
আপনার মতামত লিখুন :