আজকালের কন্ঠ ডেস্ক : আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সে অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা আমদানি ঋণপত্র (এলসি) না খুলেই অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আমদানি করতে পারবেন। তবে রমজান সামনে রেখে পুরো এক মাসের পণ্য না কিনতে ভোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গতকাল বুধবার ঢাকায় সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের পঞ্চম সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় সাতটি পণ্য নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। সবাই জানান, বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে, তাতে পণ্যঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই। তবে ডলার–সংকট রয়েছে। এই সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের ব্যাংকে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে। তাই ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে দেরি করছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করবে। কেউ যদি এলসি খুলতে চান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সহায়তা করবে। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হবে। তিনি বলেন, এলসি ছাড়াও সরকার পণ্য আমদানির অনুমতি দেবে। তেমন হলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেব, এলসি লাগবে না।’
এ সময় বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘এলসি ছাড়া আমরা পণ্য আমদানির অনুমতি দিতে পারি। এলসিবিহীন পণ্য আনা যায়। সে রকম পরিস্থিতি হলে আমরা অনুমতি দিয়ে দেব, এলসি লাগবে না।’ এলসি ছাড়া পণ্য আমদানি প্রসঙ্গে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘এটা করা যায়। ছোটখাটো খুব প্রয়োজন হলে আমরা দিতে পারি।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে যদি নির্দিষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়, তাহলে ভালো হবে। আমরা এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংককে লিখব।’
টিপু মুনশি বলেন, সভায় চিনির দাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে চিনির দাম কিছুটা বেশি। এ অবস্থায় রমজান উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আমদানি শুল্ক কমাতে চিঠি দেওয়া হবে। চিনির ওপর এখন যে শুল্ক আছে তা যেন পুনর্বিবেচনা করে এনবিআর। এটা শুধু রমজান উপলক্ষে। বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ ও ছোলার দাম এখন সহনীয় আছে। এসব পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়েনি। আন্তর্জাতিক বাজারে যে সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে, তা-ও নয়। ভালো অবস্থায় আছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দাম ভবিষ্যতে বাড়বে না। দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গত বছরের তথ্য অনুযায়ী মজুত করা হয়েছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই।
তবে একটু সমস্যা আছে—এলসি খোলায় ধীরগতি। আমরা এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করতে চাই। ঘাবড়ানোর মতো পরিস্থিতি হয়নি।’ রমজান মাসে পণ্য নিয়ে সমস্যা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, রমজান শুরুর এক সপ্তাহ আগে ক্রেতারা বাজারে উপচে পড়েন। সেটির দরকার নেই। এক মাসের পণ্য একবারে না কিনে প্রতিদিন কিনলে সমস্যাটা হয় না। ক্রেতাদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের সব মানুষ যদি মনে করেন, এক দিনে সব কিনে ফেলবে, সেটি ঠিক হবে না। সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে। ইতিবাচক মানসিকতা রাখতে হবে। হুট করে পণ্য কেনার দরকার নেই। পুরো রমজান মাসেই পণ্য পাওয়া যাবে। আপনারা এক মাসের জিনিস একসঙ্গে কিনবেন না। আমরা সার্বিকভাবে চেষ্টা করছি, রমজান মাসে যাতে সমস্যা না হয়।’
ক্রেতারা যদি বেশি কিনতে চান, সেটি তাঁদের বিষয়; কিন্তু সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত নয়, এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব মানুষ যদি এক দিনেই মনে করেন সব কিনে ফেলবেন, তাহলে কীভাবে হবে? সরবরাহ ঠিক রাখতে হবে।’
গত বছরের এপ্রিল থেকে দেশে ডলারের সংকট শুরু হয়। সেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি ডলারের দাম ৮৬ থেকে বেড়ে ১০৭ টাকায় উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার–সংকট কাটাতে নানাভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে আমদানি ঋণপত্র খোলা কমিয়ে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি ডলার-সংকটের কারণে আমদানি দায় পরিশোধও পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ছিল। এখন বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও খাদ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছে। যেসব ব্যাংকের রপ্তানি আয় নেই, তারা ঋণপত্র খুলছে না।
সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, রমজানকে কেন্দ্র করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বিশেষ কোটা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চলমান ডলার–সংকটের মধ্যে রমজানের আগে নিয়মিত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পণ্য আমদানিতে বিশেষ কোটা চেয়েছেন তাঁরা। এ সময় তিনি ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে বলেন, প্রস্তাবটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, রমজানে যেন কোনো সরবরাহ–সংকট না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি পণ্য—ভোজ্যতেল, ছোলা, মসুর ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও খেজুর মজুতের ব্যবস্থা করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :