আজকালের কন্ঠ ডেস্কঃ বান্দরবান পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে রামু রাবার বাগান হয়ে মাত্র ১২ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ২৮ কিলোমিটারের মধ্যে এই উপজেলা অবস্থান। নাইক্ষ্যংছড়ির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সারি সারি পাহাড় আর সবুজের কার্পেট যেন আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, ছুটির দিনে পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ির উপবন শৈলশোভা লেকে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় সব সময় লেগেই থাকে। এ অঞ্চলে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গের ঢালে সৃষ্ট দুটি কৃত্রিম হ্রদ, দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু, পাহাড়ি মনোরম পরিবেশ, পাহাড়ি ঝিরি, আছে সু উচ্চ বৃক্ষের ওয়াচ টাওয়ার, বসার জন্য বাহারি পাহাড়ি সাজে মাচাং ঘর, পাহাড়ি ঝর্ণা, লেকের পাড়ে অন্যরকম আলোক সজ্জা বিশিষ্ট রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে পাখির কলকাকলি উপভোগ করতে ঈদের দিন এখানে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখোরিত থাকে।
জেলা পরিষদের সরকারি রেস্ট হাউজে পর্যটকদের রাতযাপনের সুযোগ রয়েছে।পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি পর্যটকের ভালো মন্দ দেখাশোনায় সহযোগিতা করে থাকে প্রশাসন।
নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সেতু ও মনোরম পরিবেশ উপভোগ করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ প্রেমী আসে। তারা লেকের স্বচ্ছ জলধারায় বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে। তাছাড়া শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে শিশু পার্ক।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গয়াল প্রজনন কেন্দ্র, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিয়ে গবেষণার জন্য নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের বিছামারা এলাকায় ১৬২ একর জমির ওপর স্থাপিত হয়েছিল প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। বর্তমানে এ ইনস্টিটিউটে প্রাণী নিয়ে গবেষণার কাজে নিয়োজিত আছেন প্রতিষ্ঠানের ১৪ কর্মকর্তা-কর্মচারি। এখানে ছয়টি প্রজাতি ভেদে গয়াল, শতাধিক হরিণ, বিশাল ভেড়া পাল, ১৪৮টি ছাগল, ৪৫টি বন্য ও বিভিন্ন বন মুরগি রয়েছে। এসব পাহাড়ি পশু-প্রাণী সরাসরি দেখার জন্য পর্যটকরা নাইক্ষ্যংছড়িতে আসছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ লোনা পানির কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি প্রতিষ্টা করেছে আকিজ গ্রুপ, উপজেলার দুর্গম ঘুমধুম ইউনিয়নের পাহাড়ে ২৫ একর ভূমিতে ২০১০ সালের শেষের দিকে মালয়েশিয়া থেকে অর্ধ শতাধিক লোনা পানির কুমির দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে উঠা কুমির প্রজননকেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। দুর্গম পাহাড়ের ওপর পানির কুমিরের দৌড়ঝাঁপ দেখে আনন্দ পান পর্যটকরাও।
গবেষণা ইনস্টিটিউটে ছয়টি প্রজাতি ভেদে গয়াল, শতাধিক হরিণ, বিশাল ভেড়া পাল, ছাগল, বিভিন্ন বন মুরগি রয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়িতে অবস্থিত সোসং ও কোয়াসং ঝর্ণা। ঝর্না দুটির মধ্যে একটির উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট ও অপরটি ২০ ফুট। এছাড়া উপজেলার হর্টিকালচার সেন্টার, বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ রাবার বাগান এবং সীমান্তের কাছাকাছি আশারতলী এলাকায় গড়ে উঠেছে চা-বাগান, যা সিলেটের একটা আবাহ এনে দেয়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, নাইক্যংছড়িতে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসন। পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি রূপে রূপবান। এখানকার পাহাড়, প্রকৃতি ও ঝর্ণাধারা অসাধারণ। এ স্পটগুলো পর্যটনের আওতায় নিয়ে আনা হচ্ছে। তাই অপর সম্ভবনার এ অঞ্চলকে পর্যটন জোন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, পর্যটন সম্ভাবনাময় শিল্প। চলমান পর্যটন স্পটের পাশাপাশি নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র আবিষ্কারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :