মেরাদিয়ায় রাস্তা দখল করে বসছে হকার, লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ


বাংলাদেশের কণ্ঠ ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুলাই ১২, ২০২৪, ৬:৪৩ অপরাহ্ন /
মেরাদিয়ায় রাস্তা দখল করে বসছে হকার, লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

রাজধানীর রামপুরা থানাধীন মেরাদিয়ায় অবৈধভাবে হাট বসিয়ে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। এই টাকার একটিও পায় না ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসি) বা ঢাকা জেলা প্রশাসক। প্রায় ১০ বছর ধরেই ডিএসসিসি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে থাকা হাটবাজারের তালিকায় মেরাদিয়া হাটের নাম নেই। অবৈধ হাট বসানোর স্থানীয় বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়েছেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতি বুধবার মেরাদিয়ায় হাট বসিয়ে সুবিধাভোগীমহল চাঁদাবাজ লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে থাকে। বাড়ির মালিকদের অনুমতি ছাড়া বাড়ির গেটে এবং সামনে জোর-জবরদস্তিকরে দোকানের চকি, ভ্যান ইত্যাদি বসানো হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বাসার সামনে দোকান বসানোতে বাধা দিলে হাটের চাঁদাবাজ লোকজন বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন, গালিগালাজ করেন, অনেক সময় বাসার দারোয়ান বা কেয়ারটেকারদের মারধর করেন।

সাপ্তাহিক অবৈধ হাটের কারণে জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি বা যানবাহন বাসা থেকে বের করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেউ অসুস্থ হলে রোগীর গাড়ি বের করা অথবা অ্যাম্বুল্যান্স ডাকলে তা বাড়ির কাছে আনা সম্ভব হয় না। হাটের দিন চাঁদাবাজ লোকজন বাসার গেটের সামনে দোকান বসিয়ে অনেক সময় বাসা থেকে হাটের দিন গাড়ি বের করতে দেয় না।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিটি কর্পোরেশন তেকে হাটের অনুমোদন না থাকায় পরিত্যক্ত ময়লা, পলিথিন, প্লাস্টিক ইত্যাদি বর্জ্য রাস্তা ও বাসাবাড়ির সামনে যত্রতত্র ছড়ানো থাকে যা পরিষ্কার করার কেউ থাকে না। সরকারি কোনও দপ্তর ওই ময়লা পরিস্কারের দায়িত্বও নেয় না। হাটবারের দিন এলাকায় চুরি, ছিনতাই বেড়ে যায়। বাসা বাড়িতে চুরি হয়। হাটে পকেটমার, মোবাইল চুরি, মেয়েদের গলার চেইন, কানের দুল চুরি-ছিনতাই হয়। এতে এলাকার বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত হাট না হওয়ায় এখানে কোনও গণশৌচাগারও নেই। যার কারণে হাটের লোকজন যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় একটি চক্র দক্ষিণ বনশ্রী এইচ ও জে ব্লক এভিনিউ রোড, এম ব্লক মেইন রোড, এইচ ব্লকের ৪ নম্বর সড়েকের কিছু অংশে হাট বসায়। চাঁদাবাজরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।

বুধবার সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও মেরাদিয়া বাজার থেকে আড়ং পর্যন্ত (জে-ব্লক ও এম-ব্লক এভিনিউ রোড) প্রতিদিন শতশত রিক্সাভ্যানের ওপর অস্থায়ী বাজার বসানো হয়। এতে এলাকার পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়। বর্তমানে এই সড়কে স্কুল, ব্যাংক, সুপারশপ, বিভিন্ন স্বনামধন্য দেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পণ্যের দোকান, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ডিআইজি টুরিস্ট পুলিশ ও পিবিআই (মেট্রো দক্ষিণ) এর কার্যালয় রয়েছে। অবৈধ হাট ও বাজারের কারণে রাজউক অনুমোদিত একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা ধীরে ধীরে একটি ময়লার বাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া দীর্ঘদিন যাবৎ বনশ্রী মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন জি এইচ জে এম এবং এন ব্লকের বাসিন্দাদের আবাসিক ও ব্যক্তিগত বাড়ির সামনে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় অস্থায়ী গরুরহাটও বসানো হয়।

বনশ্রী আবাসিক এলাকার জি এইচ জে এম এবং এন ব্লক ও দক্ষিণ বনশ্রীসহ মেরাদিয়া মৌজাস্থ মেরাদিয়া কাঁচাবাজার সংলগ্ন এলাকাটি ডিএসসিরি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ও খিলগাঁও থানার অন্তর্ভূক্ত। এই এলাকায় হলি ক্রিসেন্ট স্কুল, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইন্সটিটিউট, কচি কণ্ঠ স্কুল, ঢাকা নার্সিং কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। হলি ক্রিসেন্ট স্কুল, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইন্সটিটিউট, কচি কণ্ঠ স্কুল, ঢাকা নার্সিং কলেজ ইত্যাদি মিলে প্রায় তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় যাতায়াত করে। প্রতি বুধবার হাটের দিন ভোর হতে হাটের দোকানদারদের চৌকি ও দোকান বসানোর কারণে সকাল থেকেই স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা হাটের দিন ভিড়ের মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে রিকশা এবং অন্যান্য বাহনের সাথে ধাক্কা লেগে আহত হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে।

মতিউরের ৪ ফ্ল্যাট-১১৬ ব্যাংক হিসাব ও জমি জব্দের আদেশমতিউরের ৪ ফ্ল্যাট-১১৬ ব্যাংক হিসাব ও জমি জব্দের আদেশ
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, হাট বসানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাটের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদ হোসেন বলেন, বহু বছর থেকেই বুধবারে মেরাদিয়ায় সাপ্তাহিক হাট বসে। স্থানীয়রা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেখানে কেনা-কাটা করে। স্থানীয়দের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে তারা মেয়রের কাছে অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।