ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৮৫ কিলোমিটার রাস্তায় বেশ কিছু অংশ জুড়েই ছোট-বড় খানাখন্দে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েকদিনের টান বৃষ্টিতে এমন অবস্থা তৈরি হয়। এতে ভোগান্তি বেড়েছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা।
রোববার (১৩ আগস্ট) গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে ময়মনসিংহের ভালুকা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে পোড়াবাড়ির পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার সড়কে দেখা দিয়েছে খানাখন্দ। রাজেন্দ্রপুর থেকে ময়মনসিংহ অভিমুখী হোতাপাড়া, ভবানীপুর, মেম্বারবাড়ি, বাঘের বাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, রঙ্গিলা বাজার, এমসি বাজার, নয়নপুর, জৈনা বাজার, স্কয়ার মাস্টারবাড়ি, সীড স্টোর, হাজীর বাজার, ভালুকা ও ভরাডোবা এলাকায় মহাসড়কে খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। মহাসড়কের গাজীপুর অংশে এমসি বাজার এলাকায় তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ।
এসব খানাখন্দ সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে বৃষ্টির পানি মহাসড়কে জমে থাকা ও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকা। এসব খানাখন্দের কারণে ধীরগতিতে গাড়ি চলার কারণে পণ্য পরিবহণ ও যাত্রী পরিবহনে যেমন সময় বেশি লাগছে তেমনি মহাসড়কে যানজট বাড়ছে।
এমসি বাজার এলাকার বাসিন্দা ফাইয়াদ হাসান বলেন, প্রথম এই খানাখন্দ গুলো ছোট আকারে ছিল। বৃষ্টি শুরুর পর থেকে খানাখন্দ গুলো বড় হতে থাকে। এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে সংস্কার করা না হলে এক সময় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার চলাচল করে আলম এশিয়া পরিবহণ। ওই বাসের চালক লিয়াকত হোসেন বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কিছু জায়গায় ভাঙাচোরা ছিল। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর ভাঙাচোরা খানাখন্দে পরিণত হয়। বৃষ্টির ফলে বাড়তে থাকে খানাখন্দ, এখন কিছু খানাখন্দ বড় বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। দ্রুত মহাসড়কের খানাখন্দ সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশে ভালুকা মডেল থানার সামনে একটি বালু ভর্তি ট্রাকের পাতি ভেঙ্গে বিকল হয়ে পড়েছে। গাড়ির চালক রফিকুল ইসলাম জানান, সকালে বৃষ্টির মধ্যে ত্রিশালের বালিপাড়া থেকে রওনা হয়েছিলেন। এ পথটুকু আসতে তার আঞ্চলিক সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়েছে। পুরো সড়ক জুড়েই খানাখন্দ ভরা। কিছু জায়গা ছোট-বড় গর্তের তৈরি হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় ভালুকা থানার সামনে আসতেই তার ট্রাকের পেছনের দুই চাকার পাতি ভেঙ্গে বিকল হয়ে যায়। এই বৃষ্টির মধ্যে তারা সারাই করার মিস্ত্রি না পেয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসা এনা পরিবহনের চালক রতন মিয়া জানান, সড়কের খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। খানাখন্দ থেকে বাঁচতে মুহূর্তেই লেন পরিবর্তন করছে ছোট গাড়ি ও মোটর সাইকেল। এতে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
গত কয়েকদিন যাবৎ মহাসড়কের এমন বেহাল অবস্থা হলেও গাজীপুর সড়ক বিভাগের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গাজীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শরিফুল আলমকে একাধিকার ফোন করে এমনকি অফিসে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা ছোট ছোট খানাখন্দ বন্ধ করে কাজ করছি। বৃষ্টি কমে গেলে সংস্কার করা হবে। বৃষ্টি পুরোপুরি থেমে গেলে আমরা খানাখন্দ হওয়া পুরো অংশ জুড়েই বিটুমিন দিয়ে মেরামত করবো।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হাসান বলেন, সড়কের মধ্যে খানাখন্দ তৈরির বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তরের জেলাগুলোর সহজ ও দ্রুততম সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য বর্তমান সরকার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে ২০১৬ সালে চার লেনে উন্নীত করে।
আপনার মতামত লিখুন :