নতুন বছরের প্রত্যাশা


বাংলাদেশের কণ্ঠ ডেস্ক প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১, ২০২৪, ২:২১ পূর্বাহ্ন /
নতুন বছরের প্রত্যাশা

:: হাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম ::

নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণ সবচেয়ে বেশি। নতুনকে বরণ করে নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সঙ্গত কারণেই পুরনোকে বিদায় জানিয়েছে নতুন সময় নতুন বছর। নতুনের আবাহন, স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি আমাদের মধ্যে আসে। আমাদের স্বপ্নকে জাগিয়ে তোলে। যেমন আসে পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। এ দুটি বিশেষ দিনকেই আমরা বিশেষভাবে বরণ করে নিই। একটির মধ্যে নিহিত রয়েছে আন্তর্জাতিকতা, অন্যটি আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে বাঙালি হৃদয়ে আবর্তিত হয়। নতুন বছরে নতুন দিন আসে, আমরা উদ্দীপিত ও জাগ্রত হই। নতুন জীবনের জয়গান গেয়ে অন্তত ওই দিন উজ্জীবিত হই। উলস্নাসেও ফেটে পড়ি। আনন্দ-উলস্নাসের পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি, নতুন বছরে নতুনভাবে চলতে। নতুনভাবে জীবনযাপন করতে। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গীকারের মধ্যে প্রধান হয়ে ওঠে। এর মধ্যে থাকে ব্যক্তি অঙ্গীকারও। আমাদের জাতীয়জীবনে ২০২২ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। নানা ক্ষেত্রে উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে পার হয়েছে বছরটি।

২০২২ সালেও ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, নৃশংসতা, নির্মমতা ও রক্তাক্ত ঘটনা কমবেশি প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে দেশবাসীকে। নানা ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উতরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হয়ে কালের গর্ভে সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেল গত বছরটি, ২০২২ সাল। বিদায়ী বছরে নারী অবমাননার ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। কিছুতেই সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা যায়নি। সামাজিক অবক্ষয় দিনে দিনে চরম আকার ধারণ করছে। হেন কোনো অপরাধ নেই- যা সমাজে সংঘটিত হচ্ছে না। স্ত্রী স্বামীকে, স্বামী-স্ত্রীকে, মা-বাবা নিজ সন্তানকে, ভাই ভাইকে অবলীলায় হত্যা করছে। প্রেমের কারণে অর্থ সম্পত্তির লোভে সমাজে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অন্যদিকে হতাশা, নিঃসঙ্গতা, বঞ্চনা, অবিশ্বাস আর অপ্রাপ্তিতে সমাজে আত্মহননের ঘটনাও বেড়ে গেছে। বেড়ে গেছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদকের অর্থ জোগাড় করতে না পেরে ছেলে খুন করছে বাবা-মাকে, স্বামী খুন করছে স্ত্রীকে কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে। অন্যের সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য কিংবা কাউকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার নিমিত্তে নিজের সন্তানকে হত্যা পর্যন্ত করছে। পারিবারিক বন্ধন স্নেহ-ভালোবাসা মায়া-মমতা আত্মার টান সবই যেন আজ স্বার্থ আর লোভের কাছে তুচ্ছ। চাল তেল আলু ও পেঁয়াজের উচ্চ মূল্যের কারণে দেশবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। নিত্যপণ্যের কারসাজির কারণে মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়া আমাদের আশাবাদী করে তোলে। মেট্রোরেলের কাজও এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্ণফুলী টানেলের কাজ ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। করোনাকালেও দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েনি।

নববর্ষের এ সূচনালগ্নে সবার প্রত্যাশা জাতীয়জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতা আসুক। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও সবার চেষ্টা ছিল এগিয়ে যাওয়ার। নতুনের মধ্যেই নিহিত থাকে অমিত সম্ভাবনা। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সুযোগ করে দেবে নতুন বছর। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা গর্বিত ও আশাবাদী। এ দেশ একদিন উন্নত দেশের কাতারে যাবে। এমন স্বপ্ন দেশদরদি জনগণ দেখে, দেখে সরকারও। প্রত্যাশা করা, স্বপ্ন দেখা আর তা বাস্তবে রূপ দেওয়া এক কথা নয়। কঠিন সাধনার মাধ্যমে সত্যের মুখোমুখি হওয়া এবং তাকে সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া সহজ ব্যাপার নয়। পরিকল্পনা পরিশ্রম, গঠনমূলক চিন্তা ছাড়া যেমন ব্যক্তি, পরিবার, সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়, একইভাবে সম্ভব নয় রাষ্ট্রের উন্নয়নও। রাষ্ট্র তা যত ক্ষুদ্রই হোক তার চরিত্র হতে হয় গণমুখী তথা জনকল্যাণমূলক। বাংলাদেশ সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, উন্নত যোগাযোগ ও ট্রাফিকব্যবস্থা, নাগরিক সেবা ও জননিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা, শিক্ষা পরিস্থিতি, ভোটাধিকার বা নির্বাচনী ব্যবস্থা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নগরায়ণ, ব্যাংক ব্যবস্থাপনাসহ আর্থিক খাত, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও বাণিজ্য ঘাটতি, নিত্যপণ্যের বাজার, শেয়ারবাজার এমনিভাবে রাষ্ট্রের যে সেক্টরেই দৃষ্টি দেওয়া যাক না কেন, সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার। এ ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। আগামী দিনগুলো সমৃদ্ধি বয়ে আনুক জাতীয় জীবনে। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক নতুনভাবে। সরকারের কর্মোদ্দীপনায়, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরও বিস্তার লাভ করুক। আমরা চাই সরকার জনগণের প্রত্যাশা, আবেগ ও অনুভূতিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। দেশ ও জাতির মঙ্গলে সবার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার- নতুন বছরে এ প্রত্যাশাই করছি।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক বাংলাদেশের কণ্ঠ