জমে উঠেছে ঢাকা বোট ক্লাবের নির্বাচন


বাংলাদেশের কণ্ঠ ডেস্ক প্রকাশের সময় : জুন ১০, ২০২৪, ৪:৪৮ পূর্বাহ্ন /
জমে উঠেছে ঢাকা বোট ক্লাবের নির্বাচন

আসছে সেপ্টেম্বরে ঢাকা বোট ক্লাবের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচার প্রচারণা জমে উঠেছে। গত শনিবার সন্ধ্যায় উত্তরায় বাংলাদেশ ক্লাবে নির্বাচন ২০২৪-২০২৫ উপলক্ষে এক সঙ্গীত সন্ধ্যা ও নৈশভোজের আয়োজন করেন সভাপতি পদপ্রার্থী নাছির ইউ মাহমুদ। এই নৈশভোজে বোট ক্লাবের সর্বস্তরের সদস্যদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সবচে বড় চমক ছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামের অংশগ্রহন। নাছির ইউ মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও ইসি সদস্য। ২০২১ সালের ৮ই জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় চিত্রনায়িকা পরীমনি। এই নায়িকার ক্লাবে ভাংচুর ও মাতলামির ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তৎকালীন ইসি সদস্য নাছির ইউ মাহমুদকে ফাঁসিয়ে দেয়া হয়। সম্পুর্ণ নির্দোষ হওয়া শর্তেও এই ঘটনায় নাছির ইউ মাহমুদকে ক্লাবের ইসি সদস্য ও সকল কার্যক্রম থেকে বেআইনিভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়। ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। ২৬০ কোটি টাকা ও ৬০ বিঘা সম্পত্তির এই ক্লাবটি গত দশ বছরে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন হয়নি। কার্যত ক্লাবটিকে অচল করে রেখেছিলেন পুলিশের দুর্নীতিবাজ সাবেক আইজি বেনজির আহমেদ। অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শুরুতে বেনজিরকে ‘জীবন্ত আজরাঈল’ উপাধিতে ভূষিত করে সদস্যরা জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। এসময় উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, যে মানুষ বিপদে পড়বে তার পাশেই নাছির ইউ মাহমুদ থাকবে। নো ইস্ট নো ওয়েস্ট, নাছির ভাই বেস্ট।

সদস্য ইমরান হোসেন বলেন, বোট ক্লাব লিমিটেড কোম্পানি হলেও কোনদিন এজিএম হয়নি। বেনজীর আহমেদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দশ বছর ধরে নির্বাচনবিহীন সভাপতি হয়ে এ ক্লাবকে জিম্মি করে রেখেছে। এখন নাছির ইউ মাহমুদের লিগ্যাল নোটিশের প্রেক্ষিতে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তিন বছর ধরে নাছির ইউ মাহমুদকে ক্লাবে যেতে দেওয়া হয়নি।

এম রাকিব আল আমিন বলেন, এখন নাছির ইউ মাহমুদের হাত ধরে এই ক্লাব এগিয়ে যাবে।

সদস্য খালেদা আক্তার জাহান বলেন, ক্লাবকে গতিশীল করতে নারী নেতৃত্বকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

সদস্য তৈমুর হোসেন খান বলেন, বেনজির কোন স্বার্থে পরীমনির ঘটনায় নাছির ইউ মাহমুদকে কোরবানী দিয়ে ক্লাবের তিন হাজার সদস্যের মান সম্মান নষ্ট করলেন তা আমার বোধগম্য নয়। লাখ টাকার বাগান খেয় ফেললো সামান্য ছাগলে।

সবশেষে নাছির ইউ মাহমুদ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, তিন হাজার সদস্যের জন্য এই ক্লাব এখন যথেষ্ট নয়। তিন লক্ষ ৫০ হাজার বর্গফুটের নতুন ভবন নির্মাণ, জেটি নির্মাণ, জিমসহ আরো নানাবিধ উন্নয়ন কার্যক্রম এখন সময়ের দাবি। তিনি নির্বাচিত হলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্লাবের অসমাপ্ত কাজ সম্পূর্ণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঢাকা বোট ক্লাব গঠনের শুরুর গল্পটা বলেন।

নাছির ইউ মাহমুদ, রুবেল আজিজ সহ তিন বন্ধু মিলে চট্টগ্রাম বোট ক্লাবের আদলে ঢাকা বোট ক্লাব গড়ে তোলেন। তিন বন্ধুর গড়ে তোলা অন্য। একটি সংগঠনের ৬/৭ কোটি টাকা বোট ক্লাবে শিফট করেন। সেই ক্লাবের সম্পত্তির পরিমাণ এখন ২৬০ কোটি টাকা, ৬০ বিঘা জমি রয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠ পরিকল্পনা ও নেতৃত্বের অভাবে এটি পিছিয়ে পড়েছে। যার জন্য সবাই বর্তমান কথিত সভাপতি বেনজির আহমেদকেই দায়ী করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ঢাকা বোট ক্লাব কর্তৃপক্ষ বেনজির আহমেদকে সদস্য করে ইসি কমিটিতে স্থান দেয়। এরপর ক্লাবের উন্নয়ন, সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধার কথা চিন্তা করে তাকে সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

তার অনুরোধেই ৫ বছর করে টানা দুইবার তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু সদস্যরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে সভাপতির দায়িত্ব দেন তাতে গুড়েবালির মতো অবস্থা হয়েছে। নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বোট ক্লাবের দখল নেন। কুক্ষিগত করে রাখেন ক্লাব সদস্যদের। নিজের মতো করে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে অনেক কাজ করেছেন যেগুলো ইসি কমিটির অন্যান্য সদস্য ও সাধারণ সদস্যরা মেনে নিতে পারছেন না। সদস্যদের ভালোলাগার ক্লাবটি এখন বেনজীরের জিম্মি হয়ে আছে। ক্লাবের ফান্ডে থাকা ২৬০ কোটি টাকার বিষয়েও খোঁজ বা পাত্তা পাচ্ছেন না ক্লাব সদস্যরা।

সাম্প্রতিক সময়ে বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের খবর চাউর হওয়ার পরেই সোচ্চার হয়েছেন সাভারের আশুলিয়ার বিরুলিয়ায় তুরাগ নদের তীরে নির্মিত ঢাকা বোট ক্লাবের কয়েক হাজার সদস্য। ২০১৪ সালে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরপরই ক্লাব সদস্যরা বেনজীর আহমেদকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছেন। সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পুলিশের উচ্চপদস্থ অন্তত ২০০ জন কর্মকর্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান অনেক ভিসিসহ ৩০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক, সাবেক-বর্তমান ২০ জনের মতো মন্ত্রী, এমপি, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক ডজনখানেক সচিব, শতাধিক শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, সিনিয়র সাংবাদিক, সম্পাদক, নানা শ্রেণি-পেশার সদস্যদের এই ক্লাব। তারা সভাপতি হিসেবে বেনজীরকে দেখতে চান না। সভাপতি হিসেবে আধিপত্য বিস্তার, ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বেপরোয়া কর্মকাণ্ডসহ নানা কারণে ক্লাব সদস্যরা বেনজীরের ওপর ক্ষুব্ধ। সাধারণ সদস্যরা বলছেন, বর্তমানে সামাজিক এই ক্লাবটিতে বিব্রতকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বেনজীরের অপকর্ম জানাজানির পর তার সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়া আর কোনো সদস্যই চাচ্ছেন না তিনি সভাপতি হিসেবে থাকেন। সবাই চান তিনি নিজে থেকে সরে যান।

রাজধানী বিভাগের আরো খবর

আরও খবর