লন্ডন প্রবাসী লেখক, কলামিস্ট ও ব্লগার, মোঃ ইউসুফ হোসাইনের চাঁদপুরের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে অজ্ঞত দুর্বৃত্তরা। এই আক্রমনের ফলে মোঃ ইউসুফ হোসাইনের বাবা ও মা মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক অনুসারে, মোহাম্মাদ ইউসুফ হোসাইন, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার চরমান্দারি গ্রামের জনাব নুরুল আমিন ও মোবাশ্বেরা বেগমের একমাত্র ছেলে। মোঃ ইউসুফ হোসাইন একজন স্বনামধন্য লেখক, কলামিস্ট ও ব্লগার এবং তিনি রাজনীতির উপর অনেক বই লিখেছেন। জনাব হোসাইন বর্তমানে ইউকে বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যুতে স্বরব থাকেন। জানা যায়, মোহাম্মাদ হোসাইন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করেন এবং সম্প্রতি তার একটা প্রকাশনাকে কেন্দ্র করে তিনি একটা পোস্ট দিয়ে এলাকায় আলোড়ণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাংলাদেশের পতিত সরকার (আওয়ামিলীগ), বিএনপি এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে অনেকগুলো বই লিখেছেন। এছাড়া বিএনপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে লাগাতার ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতা, মোঃ জসীমউদ্দীনের বিরাগভাজন হয়ে আছেন।
স্থানীয় লোকেরা জানান যে, ইউসুফ হোসাইন ৫ই আগষ্টের আগে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের ভয়ে দেশে আসতে পারেনি এখন আবার বিএনপি নেতা ও তার গুন্ডাবাহিনীর ভয়ে দেশে আসতে পারছেন না। তারা আরো জানান যে গত ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন এবং তিনি এর আগে পতিত সরকারের ভয়ে দেশের মাটিতে ফিরতে পারেনি। কারণ তিনি আওয়ামীলীগ সরকারে দূর্নীতি ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ইউসুফ লাগাতার আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে কলাম লিখে ও বই প্রকাশ করে যুব সমাজক আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে ছিলেন। ফলে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীরা ইউসুফকে হত্যা করার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু ইউসুফ ইউকে বসবাস করার কারণ তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিছুদিন আগ থেকে ইউসুফ হোসাইনের একটা নতুন বই প্রকাশনা নিয়ে একালায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল কারণ সেই বইতে নাকি বিএনপির অপকর্ম নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে। এই লেখার জের ধরে ইউসুফে হোসেনের এলাকার স্থানীয় বিএনপি নেতা জসিমউদ্দীন এই হামলা চালাতে পারেন বলে তারা জানান।
বৃদ্ধ মাতা পিতাকে দেখার ইচ্ছা পোষণ করে কিছুদিন আগে ওই বিএনপির নেতার কর্মকান্ড নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট দেন। এতে ওই নেতা ও তার লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ইউসুফের বাড়িতে গিয়ে তার মাতা পিতাকে শাসিয়ে ও হুমকি দিয়ে আসেন। কিন্তু পরের দিন রাতে এক দল অজ্ঞাত মুখোশদ্বারি লোক ইউসুফের বাড়িতে হামলা চালিয়ে এই ধ্বংসযোগ্য চালায়। এতে ইউসুফের পিতা মাতা আহত হয়ে হাসপাতে ভর্তী হলে পরে তাদেরকেও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান এলাকার লোকজন।
ইউসুফ হোসাইনের প্রতিবেশী নাম না প্রকাশের শর্তে জানান গত ১৫ তারিখ আনুমানিক রাত ১২টার সময় একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত ইউসুফের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। এই অগ্নিকান্ডে ইউসুফের বাবা ও মা মারাত্মক ভাবে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও অনেক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। এলাকাবাসীদের মতে বিএনপি নেতার ভয়ে হাসপাতাল থেকে ইউসুফের পিতা মাতা পালিয়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। আমাদের সংবাদ কর্মী তাদের অবস্থান জানতে চাইলে, এলাকার রাজু খন্দকার বলেন, হাসপাতালে ভর্তী হওয়ার পর থেকে তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জসিমউদ্দীন ও তার লোকজন হাসপাতালে গয়ে ইউসুফের মাতা পিতাকে এলাকা ছাড়তে হুমকি দিয়ে এসেছিলেন।
এলাকার অবসর প্রাপ্ত একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, ৫ আগষ্টের থেকে বিএনপি পতিত স্বৈরাচার আওয়ামীলীগের চেয়েও আরো ভয়ংকর রূপ ধারণ করে লুটপাট, চাঁদাবাজি, ভূমিদখল, বাস ও ট্রাক থেকে চাঁদা উত্তোলন, সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রারকে চরমভাবে ব্যহত করে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকার অবাধ্য নেতাদের নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। ইউসুফ হোসাইন এই সব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন এবং বিএনপির এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট লিখেন এবং সম্প্রতি বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে বই প্রকাশে কথা ফেসবুকে প্রকাশ করলে এলাকার বিএনপি নেতা কর্মীরা ফুঁসে উঠে। তিনি বলেন, ইউসুফ হোসাইন বাংলাদেশ থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং ইউকে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাক্তি ও রাজনৈতিক দল নিয়ে কলাম লিখেন। গত কয়েকদিন আগে বিএনপি রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে একটা বই লিখেন যা এখনও প্রকাশনাাধীন। এর ফলে এলাকার বিএনপির নেতা কর্মিদের মধ্যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃস্টি হয়। গত কিছুদিন আগে এলাকার বিএনপি নেতা ও লোকজন ইউসুফ হোসাইনের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা মাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসেন এবং এই বলে শাসিয়ে আছেন যে ইউসুফ বিএনপির বিরুদ্ধে আর কোন লেখালেখি করলে তাতে এর জন্য মাশূল দিতে হবে। স্থানীয় সংবাদ কর্মীর বরাতে জানতে পারলাম যে বিএনপি নেতা জসীম উদ্দীন একজন জন ভূমিদস্যু এবং তার নামে অনেক হত্যা মামলা আছে।
এলাকার একজন জনপ্রতিনিধী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউসুফ হোসাইন দেশে থাকা অবস্থায় এলাকার ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজ, মোঃ জসীমউদ্দীন, এর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থাকায় ওই নেতা ইউসুফের কোন ক্ষতি করতে না পারলেও, সরকার পতনের সাথে সাথে ইউসুফের হোসেন এর উপর প্রতিশোধ নিতে বিভিন্ন ভাবে তার বাবা মাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করে আসছিল। গত দুই দিন আগে একটা ফেসবুক পোস্ট নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি শুরু হয় এবং রাতের অন্ধকারে একদল দূর্বিত্ত ইউসুফের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। তখন ইউসুফের বাবা ও মা ঘুমান্ত অবস্থায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে যে এই অগ্নি সংযোগ বিএনপি নেতার লোকজনই করেছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ভারপ্রাপ্ত চেয়্যারম্যান মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, ইউসুফ হোসাইন একজন স্বনাম ধন্য লেখক ও কলামিস্ট। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে অনেকগুলো বই লিখেছেন। জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে অনেক গুলো ফৌজদারি মামলা ফাইল হয়েছিল। পতিত সরকারের অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং বিভিন্ন পত্রপত্রীকায় কলাম লিখেছেন। এর আগে রাজনৈতিক ইস্যুতে স্থানীয় বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে তার একটা বিরোধ ছিল এবং তিনি ইউসুফের উপর প্রতিশোধ নিতে আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে তিনি এলাকার ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নেন। ওই নেতার কূকীর্তির বিরুদ্ধে তিনি একটা পোস্টা দেয়ায় ওই নেতার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরের দিন রাতে কে বা কারা ইউসুফের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বাড়ি পুড়িয়ে চলে যান এবং ইউসুফের বাবা-মাতে এতে মারাত্মকভাবে আহত হনএবং এলাকার স্থানীয় লোকেরা হাসপাতেলে ভর্তি করেন। কিন্তু শুনা যায় পরের দিন ইউসুফের বাবা মা হাসপাতাল থেকে পালিয়ে অন্যত্র চলে যান। এলাকার কেউ কেউ ওই নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেন যে বিএনপির ওই নেতার হুমকিতে ইউসুফের মাতা পিতা হাসপাতাল থেকে পালিয়েছে।
আমাদের প্রতিনিধি স্থানীয় ফরিদগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করলে কর্তব্যরত পুলিশ পরিদর্শক এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান।
আপনার মতামত লিখুন :